Thursday, June 24, 2010

ভিক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই - জামাল নজরুল ইসলাম



১৯৩৯ সালে বাবার কর্মস্থল ঝিনাইদহে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি পড়াশোনা করেন চট্টগ্রাম, কলকাতা, মারি (পাকিস্তান) ও ক্যামব্রিজে। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব সায়েন্স। ক্যামব্রিজে অবস্থানকালীন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন, পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম, জোসেফসন ফাইনম্যানসহ অনেকের ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যে এসেছিলেন, যাঁদের সম্পর্কে বলেছেন এই সাক্ষাৎকারে। ১৯৮৪ সালে ২২-২৩ বছরের বিদেশে বসবাসের মোহ ত্যাগ করে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেন গাণিতিক পদার্থবিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র। প্রফেসর জামালের গবেষণা গ্রন্থ 'The Ultimate Fate of the Universe' বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে সাড়া জাগায় এবং বিশ্বের বহু ভাষায় এ গ্রন্থ অনূদিত হয়। ট্রিয়েস্টের থার্ড ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউটের মেডেলসহ পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচুর পুরস্কার। প্রফেসর ডক্টর ইসলাম Emeritus Professor, University of Chittagong-২০০৬ হয়েছেন। তাঁর চট্টগ্রামের বাসভবনে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে নাতিদীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন_ শামীম রেজা ও বিদ্যুৎ কুমার দাশ
ভিক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাইজামাল নজরুল ইসলামকালের কণ্ঠ : শৈশবের গল্প, আপনার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সম্পর্কে যদি বিস্তারিত বলেন?
জামাল নজরুল ইসলাম : জন্ম ঝিনাইদহে। বাবা খান বাহাদুর মহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম খান দেশবিভাগের সময় অবিভক্ত বাংলার ভারপ্রাপ্ত আইনসচিব ছিলেন। আমরা এসেছি এপ্রিল ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো। এখানে এসে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হলাম ষষ্ঠ শ্রেণীতে। নবম শ্রেণীতে উঠেই আমি চলে যাই পশ্চিম পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। ঠিক সেই সময় ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯ সালে মা মারা গেলেন। আমার দশম জন্মদিনের তিন দিন আগে। ও-লেভেল, এ-লেভেল লরেন্স কলেজ থেকে পাঠ নিয়েছি। এর পরে এক বছর তিন মাসে কলকাতায় সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে BA (Hon's) Mathematical Tripods শেষ করি। অক্টোবর, ১৯৫৭ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। ওখানে Mathematical Tripods বিষয়ে পিএইচডিও করি। ১৯৬৪ সালে পিএইচডি সম্পন্ন হয়। এর পর চলে যাই আমেরিকায়।
'মৌলিক কণা; গাণিতিক তত্ত্ব', 'সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব', 'মহাবিশ্ব তত্ত্ব'_এই নিয়ে প্রায় ৩০ বছর কাজ করেছি। পরে বিভিন্ন বিষয়_পদার্থবিদ্যা এবং গণিত নিয়ে বিভিন্ন রকম গবেষণার কাজ করছি। যেমন 'তরল পদার্থের গতি বিজ্ঞান', 'ঋখটওউ ডাইনামিক্স', 'গাণিতিক অর্থনীতি', 'ম্যাথমেটিক ইকোনমিক্স' এবং ইদানীং 'জীববিদ্যা' নিয়ে চিন্তা করছি। দর্শনে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সাহিত্য-সংগীতের সঙ্গে তো জড়িয়ে আছি সেই ছোটবেলা থেকেই।
আমার জন্মের আগে কলকতার বাড়িতে মহান কবি কাজী নজরুল ইসলাম আসতেন। আমার বাবার বন্ধু ছিলেন তিনি। হাবীবুল্লাহ বাহার আমাদের নিকটাত্দীয়। তিনি কবির প্রিয়জন ছিলেন, তিনিই মূলত নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের বাড়িতে। আমার বড় বোন ফেরদৌস আরা বেগমের কাছে বাবাকে লেখা একটি চিঠি ছিল কাজী সাহেবের। অনেক খুঁজেছি, আপুর মৃত্যুর পরে। পাইনি সেটি। আমার বোনও লিখতেন, কী যেন নাম জার্নালের এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, কলকাতা লেডিস ক্লাবের নিয়মিত জার্নালে তাঁর আর্টিকল প্রকাশিত হয়েছিল তিন ভাষায়_ বাংলা, উর্দু ও ইংরেজিতে। শুনেছি, সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও আব্বার সখ্য ছিল। তিনিও আসতেন বাড়িতে। বিশেষ করে কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেই আমার নাম রাখা হয়। ওই রকম তেজোদীপ্ত কবি বাংলা ভাষায় আর জন্মায়নি। তিনিই মূলত উপনিবেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কবিতা লিখেছিলেন, জেল খেটেছেন বারবার_এসব সবার জানা। তবে আমার মনে হয়, তিনিই উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতার ঘোষক। তাঁর কবিতাই তার প্রমাণ_'গাহি সাম্যের গান_/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।/... মানুষের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই।' এমন সত্য উচ্চারণ, এমন মন্ত্র ভারতবর্ষের সব জাতি-ধর্মকে এক কাতারে একত্র করেছিল। এমন অসাম্প্রদায়িক মানুষ খুব কম জন্মায় কালে কালে।
দেখুন, আজ মহাকবি আল্লামা ইকবালকে মুসলমানের কবি বানিয়ে ফেলেছেন, অথচ তিনি নজরুলের মতো অসাম্প্রদায়িক কবি। তিনি লিখেছেন, 'চিশতী নে জিস্ জমী মেঁ পৈগাম-এ-হক-সুনায়া!/নানক-নে জিস্ চমন্ মেঁ ওহদত কা গীত গায়া!/তাতারিয়োঁ নে জিস্ কো অপনা বতন বনায়া, .../জন্নত কী জিন্দগী হ্যয় জিস্ কি ফাজা মেঁ জীনা!/মেরা বতন ওহি হ্যয়! মেরা বতন ওহি হ্যয়। অর্থাৎ, চিশতী যে মাটিতে সত্যের বাণী শুনিয়েছিলেন,/নানক যে ফুলবাগিচায় গেয়েছিলেন ঐক্যের গান,/তাতারেরা যে দেশকে আপন দেশ বলে মেনেছিল... যার প্রাসাদে বেঁচে আছে এখনও ওই স্বর্গের ছাদখানি,/সেই আমার জন্মভূমি! (হিন্দুস্তান) সেই আমার জন্মভূমি! এ ছাড়া ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে তাঁর উচ্চারণ 'সদিয়োঁ রহা হ্যয় দুশমন দৌর-এ জমাঁ হমারা! অর্থাৎ শতকের পর শতক যদিও দুশমন দাঁড়িয়ে দেশের দুয়ারে! তা ছাড়া রামচন্দ্র, নানক নিয়ে যেমন কবিতা লিখেছেন, তেমন বিভিন্ন নবীকে নিয়ে লিখেছেন, ভগবত গীতা মে হ্যায় কোরঅ্যান মে..._ (পুরো কবিতাটি অস্পষ্ট এসেছে রেকর্ডিংয়ে) গীতায় যা আছে, তা কোরআনেও আছে এ নিয়ে বিভেদের কিছু নাই 'মানুষই' সত্য। মানুষের কল্যাণের জন্য সব ধর্ম। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এটা ক্ষমতালোভীদের কাজকর্ম ছাড়া অন্য কিছু নয়।
কালের কণ্ঠ : প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল তখন জানতে চাই বঙ্গভঙ্গ, দেশবিভাগ বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের কথা, যার কথা আপনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, 'বিশ্ব পরিচয়' গ্রন্থখানি পড়ে আপনি বিজ্ঞানী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ৯ বছর বয়সে_কবি বা সাহিত্যিক না হয়ে বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণের কারণ কী_ বাঙালিদের স্বভাবগত কাব্যপ্রেম থেকে দূরে গিয়ে।
জামাল নজরুল ইসলাম : রবীন্দ্রনাথের 'সোনার ধান' আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। রবীন্দ্রনাথের 'সোনার ধান' যত্ন করা, সংরক্ষণ করা, নতুন প্রজন্মের কাছে প্রচার করা আমাদের সবার দায়িত্ব (এই বলে রবীন্দ্রনাথের 'সোনার তরী' কবিতাটা দাড়ি, কমাসহ মুখস্থ বললেন)।
"গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা
রাশি রাশি ভরা ভারা ধান-কাটা হল সারা।
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
... ... ... ... ... ...
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।
শ্রাবণ গগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি
আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।"
রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, 'ওগো তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?/বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।/... আমার সোনার ধান কুলেতে এসে,' নিয়ে যাও, এই আহ্বান যেন না ভুলি আমরা।
বঙ্গভঙ্গ ব্রিটিশদের চালিয়াতি। আর ব্রিটিশদের দোসর ক্ষমতালোভী কতিপয় নেতার কারণে দেশবিভাগ হয়েছে। এর মতো ট্র্যাজেডি দ্বিতীয়টি আর নেই এই উপমহাদেশে। আমার আইরিশ একজন গুরু ছিলেন প্রফেসর জ্যামওয়ান। তিনি বলতেন, 'ইংরেজদের মধ্যে নিকৃষ্ট যত লোক ইংল্যান্ডে ছিলেন, তাঁরাই ভারতবর্ষে গিয়েছেন। ডাকাতদের তো একটা ধর্ম থাকে, এঁদের তাও ছিল না।' আমার বিদেশি বন্ধুরা, ব্রিটিশ জ্ঞানী-গুণী লোকেরাও মানসিকভাবে এমন জবরদখল কখনো সমর্থন করেননি বা এখনো করেন না। তাঁদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দীর্ঘ সেমিনার ও ঘরোয়া আলাপ-আলোচনায় দেখেছি, তাঁরা এ ব্যাপারে মর্মাহত। তার পরও দেখছি, এখনো কতিপয় লোক বিদেশি বেনিয়াদের অনুচর হিসেবে আমাদের স্বাধীন দেশে কাজ করছে। এদের প্রতিহত করা উচিত।
কালের কণ্ঠ : বলছিলেন বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার পেছনের গল্পের কথা...
জামাল নজরুল ইসলাম : ও হ্যাঁ, আইনস্টাইন আর সত্যেন বসুর কারণে আমার ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ। কী স্বপ্নের ব্যাপার, ভাবুন তো। তা ছাড়া সত্যেন বসু আমার আদর্শ। সত্যেন বসু নোবেল লোরিয়েটদের লোরিয়েট। বিশ্বে তাঁকে সম্মানের সঙ্গে স্থান দেওয়া হয় বিজ্ঞানে। তাঁর সহকর্মী ও শিষ্যরা নোবেল পেয়েছেন। পুরস্কার যেমন ব্যাপার নয়, তেমন আবার ব্যাপারও বটে বিশেষ করে নোবেল পুরস্কার। এর একটা পরিচিতি ও ঐতিহ্য আছে।
কালের কণ্ঠ : ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষ সম্পর্কে আপনার অভিমত?
জামাল নজরুল ইসলাম : রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছি আমরা দিন দিন। আমাদের মানসিকতা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। ২০০ ছাত্র মারা গেছে গত তিন দশকে_এটা কোনো কথা হয়? ৫০ জন ছাত্র দুই প্রধান দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে মারা গেছে। আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামগ্রিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমার এই দেশে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনি বলেছিলেন নব্য ঔপনিবেশিক শক্তি যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা_এদের দেশীয় দোসরদের কথা...
জামাল নজরুল ইসলাম : (একটু হেসে) বিদেশি সাহায্য সম্পর্কে ভারতের ভাষাতাত্তি্বক ডিপি পট্টানায়কের কথাই আমি বিশ্বাস করি, যিনি কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথা হয়েছিল, ভারতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতে বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোয় যে মূল উদ্দেশ্যে অনুদান আসে, সেই অনুদানের পরিমাণের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যয় হয় আসল কর্মে। আমি বিশ্বাস করি এই পরিসংখ্যান। তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাটি কী? যেখানে ভারতের প্রশাসনিক ও ভৌত অবকাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক গুণ উন্নত, সে ক্ষেত্রে ভারতে যদি ৫ শতাংশ ব্যয় হয়, তাহলে অনুমান করতে কষ্ট হবে না_দারিদ্র্য বিমোচনের নামে কারা বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ আত্দসাৎ করেছে স্বাধীনতার পর থেকে এই ৩৮ বছরে। বিদেশি সংস্থা সাহায্য দেয় আর কনসালট্যান্সির নামে তারাই বৃহৎ অংশ ভোগ করে। এই বিদেশি সাহায্যের ফলে উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি, দেশীয় সম্পদ কাজে লাগাচ্ছি না_এত দিনে নিজস্ব একটা মোটরযান কারখানাও তৈরি হলো না। আদমজী জুট মিল বন্ধ করায় বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। ধরুন, বিদেশি মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর কথা। কত টাকা দেশীয় শেয়ারহোল্ডাররা পেয়েছে? মাত্র কয়েক কোটি, তাতেই বিক্রি হয়ে গেছে রাজনীবিদ ও দেশীয় দোসর অংশীদাররা। এখন হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ থেকে। এটা কি কম্পানি আমল? লোভ-লালসা বেড়েছে, হিংস্রতা বেড়েছে এতে। অথচ পাশের দেশ ভারতে দেখুন তাদের দেশি কম্পানি, দেশীয় পুঁজি খাটছে সব ক্ষেত্রে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে, এখানে দেখি সবাই বিদেশমুখী... সামান্য কটা টাকার লোভে বিক্রি হয়।
কালের কণ্ঠ : আপনি বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাহায্য সন্দেহের চোখে দেখেন, এটা দেখেছি বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ক্ষেত্রেও...
জামাল নজরুল ইসলাম : উনি তো স্বদেশ নির্মাণ করার কারিগর ছিলেন_শ্রদ্ধেয় মানুষ, তিনি জানতেন কারা শত্রু, কারা মিত্র। আমি বারবার বলব, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি আপনারা চলে যান। আমরা এত দিন দেখেছি আপনাদের কর্মকাণ্ড, দারিদ্র্য দূরীকরণের নামে হাতে গোনা কয়েকজন সুবিধাভোগীকে তৈরি করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন রাজনীতি। ভারসাম্যহীন করেন সমাজ। দেশকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করবেন না। আপনারা চলে যান। বিদেশি হস্তক্ষেপ চাই না। স্বাধীন দেশে মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে চাই। এক পয়সার সাহায্যও চাই না, প্লিজ, চলে যান। এখনো কি কম্পানি আমল যে হাজার হাজার কোটি টাকা, সাধারণ মানুষের অর্জনের টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। আর কতিপয় বাঙালি সহচর তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। হিংস্রতা বেড়ে যায়। নির্বাচনে সহিংসতার ক্ষেত্রেও বিদেশি সাহায্যের ইন্ধন আছে। এই ভিক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে। ভিক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সব আছে। বিশেষ করে মানবসম্পদ আছে। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে দেশ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। বিশ্বসভায় প্রতিনিধিত্ব করার সব সরঞ্জাম আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আছে, তরুণদের মধ্যে আছে।
কালের কণ্ঠ : তেল, গ্যাস রপ্তানি ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে বিদেশিদের সাহায্য সম্পর্কে যদি আপনার মতামত জানান।
জামাল নজরুল ইসলাম : বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। ২০০৪ সালে ৭ মার্চের আগে ৪ মার্চ ঢাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন বিনয়ের সঙ্গে। তাঁর দেশপ্রেম, আবেগ আমার চেয়ে কম নয়। তখন ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে, কথা হয়েছে বিবিধ বিষয় নিয়ে। আমি মনে করি, বর্তমান বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ারও দেশের প্রতি মমতা কম নেই। কী এমন সমস্যা এত ছোট দেশে, যা মুক্ত আলোচনা করে মীমাংসা করা যাবে না! হ্যাঁ, ওই যে সুবিধাভোগী কিছু লোক, যারা মাত্র দুই-এক কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে যায়, যারা নেত্রীদের পাশে থেকে ভুল বোঝায়। আমার তো মনে হয়, তেল, গ্যাস আন্দোলনের খলীকুজ্জমান, আনু মুহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল্লাহ_এঁদের সঙ্গে বসা উচিত সরকার ও বিরোধী দলের। এঁরা সঠিক কথাই বলছেন। আমি প্রথমে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করতে চাই ভারতের মতো। বিশেষ করে বলব, যা-ই করি না কেন, সংসদে খোলামেলা আলাপ করে করতে চাই। লুকোচুরির কী আছে। গোপন মানেই ষড়যন্ত্র নয়_এটা যেমন সঠিক, তেমন গোপন মানে সন্দেহ জাগে। আমি কোনোক্রমেই বিদেশি কোনো কম্পানিকে একক স্বত্বাধিকার দেওয়ার পক্ষে নই। সে পোর্ট হোক, কিংবা তেল, গ্যাস হোক। সাধারণ জনগণকে অংশীদার করতে হবে সব চুক্তিতে। জনগণের জানতে চাওয়া ও পাওয়া গণতন্ত্রে মৌলিক অধিকার।
দাতা সংস্থার কথা আবার মনে পড়ছে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছিলেন, ৪০ বছরে আফ্রিকার সংস্কার ও উন্নয়নের নামে ২০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি সাহায্য এসেছিল, তা থেকে বিদেশি বিশেষজ্ঞরাই নিজেদের বেতন-ভাতা নিয়েছেন প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এটা হয়তো পাঁচ হাজার কোটি টাকায়ই সম্ভব ছিল। আমাদের দেশেও বিচার বিভাগ সংস্কারের নামে তিন মিলিয়ন ডলার সাহায্য এসেছিল_কয় টাকা খরচ হয়েছে মানুষের বিচারের কাজে! বিদেশি সংস্থার সাহায্য নেওয়ার আগে সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত চাই।
কালের কণ্ঠ : আপনি বলছেন ছাত্ররাজনীতির কথা, যা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন এবং আশ্বাস দিয়েছিলেন_তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এখন কী দেখছেন?
জামাল নজরুল ইসলাম : (ম্লান হেসে) আমার কিন্তু আন্তরিক মনে হয়েছিল তাঁর কথা। আমাকে বললেন, স্যার, অবশ্যই সঠিক ব্যবস্থা নেব ক্ষমতায় গেলে। আমি বলেছিলাম, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে ছাত্রদের পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আনার ব্যবস্থা করুন। বলেছিলাম দলীয় মাস্তানি থেকে রেহাই দেওয়ার কথা। টেন্ডারবাজি থেকে অর্থাৎ অর্থ থেকে ছাত্রদের দূরে রাখার উপায় বের করতে হবে। কত ছাত্রের প্রাণ গেলে এই ব্যবস্থা নেবে সরকার_এখন আমারও জানতে ইচ্ছে হয়। ৩০০, ৪০০, ৫০০-আমি একবার পরস্পরবিরোধী ছাত্রসংগঠনের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছি। এখন শুনছি ছাত্র ভর্তিতে ছাত্রনেতারা টাকা নেয়। এমন হলে পরবর্তী প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান, এখনই ব্যবস্থা নিন কঠোর হাতে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করুন বিশ্ববিদ্যালয়ে-অযোগ্য দলীয় হলে পরবর্তী সময়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অভিশাপ পাবেন আপনি।
কালের কণ্ঠ: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন কি?
জামাল নজরুল ইসলাম : বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, সত্যেন বসু নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তাঁকে দেওয়া হয়নি, তাঁর সহযোগীদের দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার সব কিছুর মানদণ্ড নয়। তবুও নোবেলের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। প্রফেসর আবদুস সালাম (নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত) বলেছিলেন, 'বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ যেভাবে দেখি অন্য কোনো দেশে এমন আগ্রহ লক্ষ করা যায় না।' আমিও একথা বিশ্বাস করি।
কালের কণ্ঠ: সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলুন।
জামাল নজরুল ইসলাম : সাহিত্য ও বিজ্ঞান, ধর্ম সংগীত-এগুলো কোনোভাবে পরস্পর বিরোধী নয়। বরং এগুলো সুন্দরভাবে পরস্পরের সম্পূরক ভূমিকা রাখে। সবই সুন্দর ও মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত-এখানে কারো সঙ্গে কারো বিরোধ নেই। বরং অনুভূতির আদান প্রদান উন্নত মানুষ তৈরিতে সাহায্য করবে।
কালের কণ্ঠ : বাংলা একাডেমীতে একুশে বইমেলা চলছে। এ সম্পর্কে কিছু জানতে চাইছি।
জামাল নজরুল ইসলাম : একুশের বইমেলা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক এবং সম্ভাবনাময় সুন্দর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে। '৫২ সালের একুশ তারিখই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়েছিল। যেসব গ্রন্থ একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়, তা সাধারণ মানুষের হাতে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পেঁৗছানোর ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। প্রকাশকদের প্রয়োজনে সরকারের সাহায্য নিতে হবে। গ্রামে গ্রামে গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক বইমেলা ও একুশের বইমেলা পরস্পর সম্পূরক। অগ্রসরমাণ সমাজ তৈরিতে বইয়ের ভূমিকার বিকল্প নেই। আমাদের ভাষায় বিশ্বমানের সাহিত্য রচিত হয়েছে, যা অন্য ভাষা-ভাষিরা জানে না অর্থনৈতিক কারণে। অনুবাদ করে বিশ্ব দরবারে পেঁৗছোতে হবে, জানাতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আমরা জানি আপনার লেখা বিজ্ঞানের ওপর গ্রন্থ পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। জানতে চাই, কী কী গ্রন্থ পাঠ্য হয়েছে কোন কোন দেশে?
জামাল নজরুল ইসলাম : আমার বই পাঠ্য হয়েছে (1) Ultimate Fate of the Universe, Cambridge University Press (1983), Translated : Japanese, French, Italian, Portuguese, Yugoslav ETC. (2) Rotating Fields in General Relativity (1985), (Reprint 2007) (3) Introduction to Mathematical Cosmology (1996, Second Edition-2001). পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং বিশ্বের প্রধান প্রধান সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে পড়ানো হয়।
কালের কণ্ঠ : বর্তমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষা কমিশন সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
জামাল নজরুল ইসলাম : আসলে বাস্তবায়ন দরকার। কথা অনেক হয়েছে, এখন কাজ দরকার। সব সরকারের আমলেই ত্রুটি-বিচ্যুতির পরও আলোচনা হয়, কমিশন তৈরি হয় ভালোই, কিন্তু প্রয়োগ নেই। এখন দেখতে পাচ্ছি অযোগ্য লোকরা সুবিধাভোগীদের কারণে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হচ্ছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। বিদেশে দীর্ঘদিন থাকার ফলে একটা বিষয় জেনেছি বা দেখেছি, শিক্ষক এবং গবেষক হন সমাজের সবচেয়ে মেধাবী ও প্রতিভাবান যুবক। কারণ তার মাধ্যমেই দেশ-বিশ্ব নতুন কিছু পাবে, নতুন কোনো তত্ত্ব বা আবিষ্কার বা গবেষণা বা কম হলেও ভালো কোনো শিক্ষার্থী তৈরিতে সাহায্য করবে শিক্ষকরা। দেখবেন, বিজ্ঞানের নোবেল কারা পাচ্ছেন_ওই সব স্কলারই। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকদের মান-মর্যাদা সমাজে এখন সমমানের অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় সম্ভবত হীন, দুর্বল। ফলে এমন সমাজের সৃষ্টি। বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে খুবই ভালো এক কাজ হবে। কমিশনের সবাই যোগ্য লোক। তাঁদের চিন্তা মহৎ। কিন্তু কাজটা সরকারকে ও সংশ্লিষ্ট জনদের করতে হবে। তবেই শিক্ষিত এক জাতি পাব, পাব সংস্কৃতিবান এক জনগোষ্ঠী।
কালের কণ্ঠ : বিভিন্ন সময়ে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার কথা বলেছেন, অথচ ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার বিস্তার প্রবলভাবে লক্ষণীয় মধ্যবিত্তের মধ্যে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হচ্ছে_এ সম্পর্কে যদি...
জামাল নজরুল ইসলাম : মূলধারার শিক্ষার প্রধান উপকরণ হওয়া উচিত বাংলা, তবে বাংলা স্কুলে ইংরেজির মান ভালো করতে হবে। সীমিত পরিমাণে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থাকতে পারে, যারা বিদেশে কাজ করবেন_এমন শিক্ষার্থীদের জন্য। এ দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল জ্ঞানী-গুণীকে দেখেছি, তাঁদের প্রায় সবাই বাংলা মাধ্যম থেকে এসেছেন। দেশের প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতে হলে তো বাংলা মাধ্যমই জরুরি। ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেদের বাংলায় দুর্বলতা থাকে।
আরেকটা কথা, এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ বিশ্বমানের বলে মনে করি আমি । এমন কিছু ছেলে পিএইচডি করছেন, যা পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে তুলনীয়। এই ছাত্ররাও বাংলা মাধ্যমের। যাদের দরকার, তারা ইংরেজি অবশ্যই শিখে নেবে_এটাই হওয়া উচিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কালের কণ্ঠ : আরেকটা বিষয় নিয়ে বর্তমানে ভীষণ মাতামাতি, যা হচ্ছে ইনফরমেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার প্রযুক্তি।
জামাল নজরুল ইসলাম : বিভিন্ন সময়ে বলেছি, ভারতের বিজ্ঞানী সি এন আর... একবার বলেছিলেন, ভারতবর্ষে বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ধ্বংস করে দিচ্ছি ইনফরমেশন টেকনোলজি। হুজুগে গা ভাসালে চলবে না। স্কুলের পাঠ্যবইয়ের চেয়ে কম্পিউটার মূল্যবান নয়। আগে চাই সাংস্কৃতিক মনন; বিকশিত হওয়ার জন্য নীতিবোধ তৈরি হতে হবে শৈশব থেকে, পাঠ্যপুস্তক থেকে।
কালের কণ্ঠ : দীর্ঘ বিদেশে যাপনকালীন ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টজনদের সানি্নধ্যের কথা যদি পাঠকদের বিস্তারিত বলেন।
জামাল নজরুল ইসলাম : বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী প্রচুর লেখক-বিজ্ঞানীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আমার দেশ, মানুষ, মানুষের সরলতা নিয়ে কথা বলেছি, তাঁরা আমাদের ঔপনিবেশিক অত্যাচারের দুঃসহ স্মৃতির কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গবেষণা করতে করতে বহু ধরনের ভিনদেশির সহযাত্রী হয়েছি, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নোবেল লোরিয়েট আছেন। আছেন অসাধারণ বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব, যেমন স্টিফেন হকিং। যিনি আমার দুই বছরের জুনিয়র ছিলেন ক্লাসে। ছাত্রজীবনেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। ঘনিষ্ঠতা হয়েছে, কাজ করেছি ওর সঙ্গে। ওর প্রথম স্ত্রী ভীষণ যত্ন করতেন হকিংকে। আমাদের সঙ্গেও সখ্য ছিল বেশ। এ ছাড়া জোসেফসন ফাইনম্যান, যিনি ৩৭ বছরে নোবেল পেয়েছিলেন। জিম মারলিস, জন টেলর, ডাইসন, প্রফেসর আবদুস সালাম ও মিসেস সালামের সঙ্গে ছিল পারিবারিক হৃদ্যতা। হুজিহিরো আরাকি, স্যার মাইকেল আটিয়া, জয়ন্ত নারলিকারসহ আরো অনেকের সঙ্গে ছিল অন্তরঙ্গতা। ২০-২২ বছরের পরবাসকালীন সময়ে কীভাবে ভুলি অমর্ত্য সেন ও তাঁর প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেবসেনের আন্তরিকতার কথা, তাঁদের সঙ্গে পাশাপাশি অবস্থানের বহুবিধ স্মৃতি আছে। সময় পেলে এসব নিয়ে লিখব।
কালের কণ্ঠ : তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
জামাল নজরুল ইসলাম : তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের করতে হবে, বিশেষ করে অগ্রজদের দায়িত্ব। সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সুশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সবাইকে উচ্চ ডিগ্রি নিতে হবে_এ রকম কোনো কথা নেই জীবনের ক্ষেত্রে, সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কাজের সমমর্যাদা দিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। কেন মানুষ ভিক্ষা করবে? স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও দেখি কয়েক লাখ লোক রাতে শোয়ার জায়গাও পায় না। কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর শুধু সরকারকেই নয়, বিবেকবান মানুষকেও খুঁজে বের করে সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে_যার যার স্বস্থান থেকে। যেকোনো দেশে এবং সারা বিশ্বে অগ্রগতি, সঠিক অর্থে উন্নয়ন হয় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের সমন্বয়ে। আর তার অগ্রণী ভূমিকায় থাকে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মস্পৃহা। আমাদের তরুণ স্কলাররা দেশের বাইরে সুনাম করছে, তাদের দেশের কাজে লাগানো উচিত।
কালের কণ্ঠ : দীর্ঘক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জামাল নজরুল ইসলাম : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
ছবি : বিথী পারভীন

No comments:

Post a Comment